১০ টাকা দামের পাউরুটি কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালন এবং সেই ভিডিও লাইভের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় দুই মাদ্রাসার শিক্ষককে প্রবেশন আইনে সাজা দিয়ে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার অন্য ৯ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এই তিনটি বই পড়বেন ওই দুই শিক্ষক। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এই রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুস সালাম ও একই মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক গোলাম কবির।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসমত আরা পারভীন জানান, এ মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/৩১ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আসামিদের সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে আদালত শাস্তির পরিবর্তে শর্তের ভিত্তিতে প্রবেশন মঞ্জুর করেছেন। এছাড়া মামলার অন্য ৯ আসামির দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
ইসমত আরা পারভীন আরও জানান, প্রবেশনকালীন আসামিরা এক বছরের জন্য আদালতের নিয়োগ করা একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। এই সময়ে আসামিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এই তিনটি বই পড়বেন। একইসঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা চিঠির সংকলিত বই ‘একাত্তরের চিঠি’ বই দুটিসহ পাঁচটি বই পড়বেন। নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জানাবেন। এছাড়া প্রবেশনে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামিদের ১০টি বনজ ও ১০টি ফলজ গাছ রোপণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ইসমত আরা বলেন, ‘সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম প্রবেশন। আসামিরা আপাতদৃষ্টিতে মুক্তি পেলেও আগামী এক বছর আদালতের নজরদারিতে থাকবেন। আদালতের শর্ত ভঙ্গ করলে ও আচরণ সন্তোষজনক না হলে তাদের প্রবেশন আদেশ বাতিল হবে। শাস্তি হিসেবে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/৩১ ধারার প্রত্যেক অপরাধের জন্য এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করবেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শারমীন কানিজ বলেন, ‘ফৌজদারি মামলার বাইরে প্রবেশনের বিধান একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ। আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। আশা করি প্রবেশনপ্রাপ্ত আমার দুই জন মক্কেল আদালতের শর্ত সঠিকভাবে পালন করবেন। মামলায় আনিত অভিযোগের দায় থেকেও মুক্তি পাবেন।’
গত বছরের ১৭ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসায় ১০ টাকা দামের পাউরুটি কেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করা হয়। এ ঘটনার ওপর একটি ভিডিও ভাইরাল হলে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় জনস্বার্থে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ইউনুস আলী মাদ্রাসা সুপারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলার তদন্ত করে একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ১১ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
Development by: webnewsdesign.com