ব্রেকিং

x

লহ এ পুষ্পাঞ্জলি, হে মহান নেতা

মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ ২০২০ | ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ | 344 বার

লহ এ পুষ্পাঞ্জলি, হে মহান নেতা
ছবি-সংগৃহীত

আজি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী। ১৯২০ সালের আজিকার এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন এক মাহেন্দ্রক্ষণে। বিংশ শতাব্দীর উত্তাল সময়ে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি তাহার সংগ্রামী জীবন অতিবাহিত করিয়াছেন একটি অভীষ্ট লক্ষ্য লইয়া। সেই সংগ্রামের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল বাঙালির স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি তাহা অর্জন করিয়াছে। তাই তিনি অমর ও অবিনশ্বর।

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলা যায়—‘তিনি আসিলেন, দেখিলেন এবং জয় করিলেন।’ তবে তাহা অবশ্যই সংগ্রামের মধ্য দিয়া। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের বিস্তৃত আখ্যান লইয়া অনেকেই লিখিয়াছেন এবং আরো লিখিবেন। তাহাকে মূল্যায়নের এই ধারা কখনো নিঃশেষ হইবার নহে। আজ শুধু তাহাকে বঙ্গীয় ভূভাগের সকল পুষ্পরাজি, হিমালয়ের মতো সুউচ্চ শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং বঙ্গোপসাগরের মতো উদার হৃদয় লইয়া অভিষিক্ত করিবার দিন। তাই আজি এই দিনে, সকল বাঙালির পক্ষ হইতে আমাদের বিনম্র ও বিশ্রদ্ধ উচ্চারণ ‘লহ এ পুষ্পাঞ্জলি, হে মহান নেতা’।



বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নাই কিন্তু প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালির অন্তরাত্মায় তিনি মিশিয়া রহিয়াছেন। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সহিত তাহার হৃদ্যিক ও অবিনাশী সম্পর্কের আলেখ্যটি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করিবার আজ উপযুক্ত সময়। ইতিহাসের পাঠকমাত্রই জানিয়া থাকিবেন যে, ইত্তেফাক পত্রিকাটি প্রকাশিত হইয়াছিল বিরোধী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনে। পঞ্চাশের দশকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিব ছিলেন বিরোধী শিবিরে; সংগ্রামের একই কাতারে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাকস্বাধীনতা ও স্বাধিকারের প্রশ্নে আপসহীন ভূমিকায় তাহাদের পাশে দাঁড়াইছিলেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া তাহার অসমসাহসী ‘ইত্তেফাক’ লইয়া। দেশভাগের পরে সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিব ও মানিক মিয়া—তিন জনই কলিকাতা হইতে আসিয়াছিলেন অনেকটা নিঃস্ব অবস্থায়।

দেশভাগের ফসল তখন মুসলিম লীগের গোলায়। শোষণ-নিপীড়নের মুখে তাই বাধ্য হইয়াই তাহারা অধিকার আদায়ের নিমিত্তে বিরোধী রাজনীতি সংগঠনে মনোনিবেশ করিয়াছিলেন। ১৯৪৯ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী মুসলিম লীগের। শেখ মুজিবসহ বিরোধী শিবিরের সকলেই তখন মুসলিম লীগের রোষানলে। শেখ মুজিব তখন জেলে। মানিক মিয়া জেলগেটে তাহার নিজের আর্থিক অবস্থার বর্ণনা দিয়া সরকারের একটি ডেপুটি সেক্রেটারির পদে যোগদানের নিয়োগপত্রের কথা জানাইলে বঙ্গবন্ধু বলিলেন, ‘না, মানিক ভাই, আমাদের ফেলিয়া যাইবেন না।’ মানিক মিয়া অতঃপর সেই চাকুরি প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলেন। ১৯৬৯ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে মানিক মিয়ার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। শেখ মুজিব মনে করিতেন, মানিক মিয়াকে হত্যা করা হইয়াছে। তাহার মৃত্যুর পর শেখ মুজিব আক্ষেপ করিয়াছেন, আমাকে ‘মুজিব মিয়া’ বলিবার আর কেহ রহিল না। মানিক মিয়া মৃত্যুবরণ করেন মাত্র ৫৮ বত্সর বয়সে। বঙ্গবন্ধু নিহত হন ৫৫ বত্সর বয়সে। কাকতালীয়ভাবে দুইটি মৃত্যুই ছিল অস্বাভাবিক, ষড়যন্ত্রমূলক।

আমার এই জীবনে পাকিস্তান-বাংলাদেশের অনেক নামিদামি নেতাকে দেখার সুযোগ হইয়াছে; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো কর্মীদের ভালোবাসিতেন—এই রকম নেতা আমি কমই দেখিয়াছি। মানিক মিয়ার মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু প্রায়শই আমাদের ধানমন্ডির বাসায় মিসেস মানিক মিয়ার সঙ্গে দেখা করিতে আসিতেন এবং প্রতিটি মৃত্যুবার্ষিকীতে কখনো কেবিনেট সদস্য লইয়া, কখনো দলীয় নেতাকর্মী লইয়া আসিতেন।

মনে পড়ে, শেষ মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে সারা দিন তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুও মাঝখানে আসিয়া যোগ দিলেন। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার টিকিয়া থাকিবার সংগ্রামে ও সকল সংকট উত্তরণে মানিক মিয়ার পাশে বঙ্গবন্ধু ছিলেন শক্ত প্রাচীর হিসাবে। মানিক মিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হৃদ্যিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ উভয়ে উভয়ের শেষ দিন পর্যন্ত কখনো বিস্মৃত হন নাই। স্বাধীনতা লাভের পর দেশে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি মাথাচাড়া দিয়া উঠে। অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির খবরাখবর দেশের মিডিয়াগুলোতে অতিরঞ্জিতভাবে ছাপা হইতে থাকে। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি লইয়া খুবই উৎকণ্ঠিত ছিলেন। তিনি দুঃখের সহিত বলিতেন, একটির দাম বাড়িলেও অন্যটিতে কমিত। বঙ্গবন্ধুর ধারণা, স্বাধীনতা সংহত করিতে এই অপপ্রচার ছিল প্রধান অন্তরায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সংগ্রামে, সংকটে ছিলেন অকুতোভয়। ফারাক্কা মার্চের সময় মওলানা ভাসানীর সঙ্গে আমার দেখা হইয়াছিল। অতীতের স্মৃতিচারণ করিতে গিয়া তিনি বলিয়াছিলেন, ‘আমি জীবনে যতগুলি দলের জেনারেল সেক্রেটারি পাইয়াছি, তাহাদের মধ্যে মুজিবের মতো এত সাহসী ও দক্ষ সংগঠক আর দেখি নাই।’ আমার মনে হয়, রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও তাহারা একে অপরকে খুব মিস করিতেন। প্রকৃতপক্ষে, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী ও শেখ মুজিব ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। পারস্পরিক সম্মানবোধ ও সৌহার্দবোধের সেইখানে কোনো ঘাটতি ছিল না।

কাগমারী সম্মেলনের পরে পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দীর মতবিরোধের জের ধরিয়া মওলানা ভাসানী আলাদা সংগঠন করিলে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়। সেই সময় ইত্তেফাক আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা করিত, কিন্তু মওলানা ভাসানী আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করিলে ইত্তেফাকের সঙ্গে মওলানা ভাসানীর সম্পৃক্ততার অবসান ঘটে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, দুনিয়ার বড়ো বড়ো অনেক নেতাকে দুঃখজনক মৃত্যুর সম্মুখীন হইতে হইয়াছে; ইতিহাস হইতে বিলীন করিবার অপচেষ্টা করিয়াছে, সেই শক্তিও দেখিয়াছি। কিন্তু ইতিহাসের পাঠ ভিন্ন। ইতিহাসে এই সকল মহাপুরুষ ফিরিয়া আসিয়াছেন বারংবার, ফিরিয়া আসিয়াছেন মহাগৌরবে।

নামাজের সময়সূচি

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২২ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০২ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩০ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৪ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪০ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

Development by: webnewsdesign.com