দীর্ঘ ২৬ বছর কুয়েতে ছিলেন কফিল উদ্দিন। প্রবাসের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে এলাকায় চারটি বাড়ি, বাজারে একটি দোকান করেছেন, কিনেছেন জমি। কিন্তু সম্পত্তির জন্য স্ত্রী ও ছেলের নির্যাতনে বাড়িছাড়া হয়ে এখন পথে পথে ঘুরছেন বলে অভিযোগ কফিল উদ্দিনের।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও ছেলে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন।
কফিল উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনে বলেন, ১৯৮৯ সালে ছোট ছোট চার ছেলে ও এক মেয়ে রেখে তাঁর বড় ভাই আবদুল মজিদ মারা যান। ১৯৯২ সালে তিনি ভাইয়ের স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে বিয়ে করেন। পরে ভাইয়ের চার ছেলে ও এক মেয়েকে আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করেন তিনি। এর মধ্যে একটি ছেলের জন্ম দেন স্ত্রী হোসনে আরা।
কফিল উদ্দিন বলেন, নিজের টাকায় ভাইয়ের চার ছেলেকেই প্রবাসে পাঠিয়েছেন। দীর্ঘ ২৬ বছর কুয়েতে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় যতবারই ছুটিতে দেশে এসেছেন, জায়গা–জমি কিনেছেন। প্রবাসের ২৬ বছরের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে এলাকায় ৪টি বাড়ি, স্থানীয় ধারিয়ারচর বাজারে ১টি দোকান এবং ১৭ কানি জমি কিনেছেন। ২০১৯ সালে একেবারে দেশে চলে আসেন। এর আগেরবার ছুটিতে এসে একটি জমি কেনার জন্য স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন।
এবার দেশে আসার পর নিজের ছেলে সাইফুল ইসলাম ব্যবসার টাকার জন্য তাঁকে চাপ দিতে থাকেন। পরে ১২ লাখ টাকা দিয়ে স্থানীয় বাজারে তাঁকে একটি কাপড়ের দোকান করে দেন। স্ত্রীর কাছে জমি কেনার জন্য দেওয়া ১০ লাখ টাকার হিসাব চাইলে স্ত্রী হিসাব না দিয়ে উল্টো ছেলে ও তাঁর নামে সব সম্পত্তি লিখে দিতে চাপ দিতে থাকেন।
কফিল উদ্দিন বলেন, তাঁরা সব সম্পত্তির দলিল নিজেদের দখলে নিয়ে যান। দলিল বুঝিয়ে দিলে সম্পত্তি বণ্টন করে দেবেন বললেও তাঁরা রাজি হননি। উল্টো বিদেশে থাকা ভাইয়ের চার ছেলের পরামর্শে দেশে স্ত্রী ও নিজের সন্তান তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন।
কফিল উদ্দিন আরও বলেন, সাড়ে পাঁচ মাস আগে ভাগনির বাড়ি থেকে তাঁকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে আসা হয়। এরপর ঘরে আটকে রেখে সস্পত্তি লিখে দিতে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে ওষুধ মেশানো পানীয় খাইয়ে তাঁকে অচেতন করে ফেলেন। পরে অচেতন অবস্থায় টিপসই নিয়ে কিছু সম্পদ তাঁদের নামে লিখে নেন। তিনি বাঞ্ছারামপুর থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকেই তিনি বাড়িছাড়া। পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
কফিল উদ্দিন বলেন, ‘মামলার পর থেকেই মেরে ফেলার জন্য আমাকে তারা খুঁজতেছে। আমার নিজের ঘরবাড়ি থাকা সত্ত্বেও আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমি এসব অন্যায়, অত্যাচার-নির্যাতনের বিচার চাই। কষ্টার্জিত অর্থে গড়া সম্পত্তি ফেরত চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে কফিল উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবাকে নির্যাতন করে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ সত্য না। বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। বাবাকে কখনোই সম্পত্তির জন্য নির্যাতন করা হয়নি।’
Development by: webnewsdesign.com