রাশিয়া থেকে কি তাহলে সৌদি আরবে চলে যাচ্ছে চেলসির মালিকানা? এমন খবরই তো ভাসছে বাতাসে।
ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের জেরে বিপর্যস্ত রোমান আব্রামোভিচ চেলসি বিক্রি করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন ধনকুবের বহুজাতিক সংস্থার অংশ হিসেবে ইংলিশ ক্লাবটিকে কেনার আগ্রহ দেখিয়েছিল।
এখন শোনা যাচ্ছে, সৌদি আরবের একটি মিডিয়া গ্রুপও চেলসি কিনে নিতে চায়। সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার ৯৪ কোটি টাকা) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও নাকি দেওয়া হয়েছে এ জন্য।
আব্রামোভিচ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘কাছের লোক’ হওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকার তাঁর সম্পদ জব্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, চেলসিকে বিক্রি করার বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতাও হয়েছে। আর এতেই নতুন করে খুলেছে চেলসি বিক্রির দুয়ার।
চেলসির সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে যে সৌদি মিডিয়া গ্রুপের কথা শোনা যাচ্ছে, তা সৌদি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলখেরেইজির মালিকানাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বানানো ব্যক্তিগত কনসোর্টিয়াম। এর মূল প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার হোল্ডিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর বাবা আবদুলেল্লাহ আলখেরেইজি।
মোহাম্মদ আলখেরেইজি এখন ইঞ্জিনিয়ার হোল্ডিং গ্রুপের প্রধান নির্বাহী। যুক্তরাজ্যের কাস বিজনেজ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। জার্মানির ডয়েচ ব্যাংকেও তিন বছর কাজ করেছেন।
মোহাম্মদ আলখেরেইজি চেলসির সমর্থক। স্টামফোর্ড ব্রিজে চেলসির ম্যাচেও তাঁকে দেখা গেছে অনেকবার। গত নভেম্বরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে চেলসির ১–১ গোলের ড্র ম্যাচেও ছিলেন।
মজার বিষয়, আব্রামোভিচকেও সর্বশেষ স্টামফোর্ড ব্রিজে দেখা গেছে সেই ম্যাচেই। ২০১৭ সালে আর্সেনালের বিপক্ষে চেলসির ৩–১ গোলের জয়ের ম্যাচও গ্যালারিতে বসে দেখেছেন মোহাম্মদ আলখেরেইজি। তাঁর সন্তানেরাও চেলসির সমর্থক। অর্থাৎ মোহাম্মদ আলখেরেইজির চেলসি কেনার আগ্রহের পেছনে আর্থিক কারণের সঙ্গে ব্যক্তিগত কারণও আছে।
সিবিএসস্পোর্টসের সংবাদকর্মী বেন জ্যাকবস জানিয়েছেন, মোহাম্মদ আলখেরেইজির সঙ্গে সৌদি আরব সরকারের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। চেলসি কিনতে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি আর্থিক কোনো সাহায্য করা হচ্ছে না।
তবে বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করায় সৌদি সরকারের সাহায্য পাচ্ছেন মোহাম্মদ আলখেরেইজি, জানিয়েছেন বেন জ্যাকবস। টুইটে তিনি এই কথার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘চেলসি কেনার প্রসঙ্গে “সরকারি কোনো সংযোগ নেই” কথাটা শুধু কাগজে–কলমেই। বাস্তবতা বেশ ভিন্ন। অবশ্যই সীমালঙ্ঘন এবং প্রভাব খাটানো হবে। চেলসি সৌদির কারও মালিকানায় গেলে খেলাধুলায় সৌদি আরবের প্রভাব কিছুটা হলেও বাড়বে। ধনী বিনিয়োগকারীরা আইনগতভাবে হয়তো সৌদি সরকারের মুখপাত্র হবেন না। কিন্তু তাঁরা অফিশিয়ালদের মতোই হবেন। সৌদি এমন কিছুর (চেলসি) মালিক হলে (যুবরাজ) মোহাম্মদ বিন সালমান উপকৃতই হবেন।’
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের স্নেহধন্য কনসোর্টিয়াম গত বছর অক্টোবরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড কিনে নেয়। ইংলিশ ক্লাবটির মালিক সৌদি মালিকানাধীন কনসোর্টিয়াম সৌদি পাবলিক ইনভেস্ট ফান্ডের (পিআইএফ) প্রধান তিনি।
ফুটবলে মোহাম্মদ আলখেরেইজির আগ্রহ অবশ্য নতুন নয়। সৌদি আরবের ঘরোয়া ফুটবলে অন্যতম সফল ক্লাব আল নাসরের পৃষ্ঠপোষক তিনি।
ক্লাবটিকে একটি স্টেডিয়ামও বানিয়ে দিয়েছেন। দেশটির আরেক সফল ক্লাব আল হিলালের সঙ্গেও সৌদি মিডিয়া গ্রুপের সংযোগ রয়েছে। এ বছরের শুরুতে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে চেলসির কাছে হেরেই বিদায় নেয় আল হিলাল।
Development by: webnewsdesign.com