দেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রাঘাত ও ঝড়ে ছয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও পিরোজপুরে বজ্রাঘাতে একজন করে মারা গেছেন। আর শরীয়তপুর ও মানিকগঞ্জে ঝড়ের সময় গাছ ভেঙে পড়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বজ্রাঘাতে মঞ্জুরুল হক (৩০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৮টার সময় উপজেলার পোড়াকান্দলিয়া ইউনিয়নের রাউতি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ধোবাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আলী আহমেদ মোল্লা জানান, সকালে ওই কৃষক নিজ বাড়ির আঙিনায় আমগাছের নিচে বসে কাজ করছিলেন। হঠাৎ কালো মেঘ ধেয়ে আসতে দেখে দাড়ানো মাত্রই বজ্রাঘাতের শিকার হন তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত মঞ্জুরুল পোড়াকান্দলিয়া ইউনিয়নের রাউতি গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কলমা ইউনিয়নে বজ্রাঘাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম ধীরেন পোদ্দার (৫৮)। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেইন এ খবর নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাশিরা গ্রামের কৃষক ধীরেন ধানকাইচ গ্রামে জমিতে কাজ করছিলেন। বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হলে তিনি নিহত হন। ধীরেন ছিলেন বাশিরা গ্রামের রুপা পোদ্দারের ছেলে।
নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালীতে বজ্রাঘাতে মো. সোহরাব (২৭) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকাল ৫টার দিকে আলোকবালীর উত্তরপাড়া গ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মো. সোহরাব কৃষিকাজ করতেন। তিনি স্থানীয় কৃষক আবু সাইদের ছেলে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার সারাদিন নিজেদের খেতের ধান কাটার কাজ করেছিলেন বাবা-ছেলে আবু সাইদ ও সোহরাব। কাজ শেষে বিকাল ৫টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে হালকা বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। বাড়ির কাছাকাছি একটি জায়গায় চলে আসার পর সোহরাবের শরীরে বজ্রাঘাতের ঘটনা ঘটে। ওই অবস্থায় তাকে নৌকায় করে স্থানীয়রা নরসিংদী সদর হাসপাতালের নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে তাকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ আমীরুল হক জানান, বজ্রপাতের ঘটনায় হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই যুবককে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি।
পিরোজপুর
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বজ্রাঘাতে নিমাই চন্দ্র হাওলাদার (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের মাঠে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক নিমাই চন্দ্র হাওলাদার দুই সন্তানের জনক। মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন শুরু হলে নিমাই চন্দ্র হাওলাদার মাঠে থাকা তার গরু আনতে যান। এ সময় বজ্রপাত হলে তিসি আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে মিরুখালী বাজারে থাকা এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নড়িয়ায় ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে একজনের মৃত্যু
শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে জহু আকন (৬০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জাকির খাঁ কান্দি গ্রামে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। জহু আকন ওই গ্রামের মৃত হযরত আলী আকনের ছেলে।
নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বৃদ্ধ জহু আকন নিজ ঘরের বারান্দায় বসে ছিলেন। হঠাৎ করেই ঝড় শুরু হলে বাড়িতে থাকা একটি চাম্বল গাছ ভেঙে পড়ে। গাছটি ঘরের চালা ভেঙে জহু আকনের মাথায় আঘাত করে। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাত ৮ টার দিকে শরীয়তপুর জেলা সদরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নড়িয়া থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে নড়িয়ায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তবে কেউ আহত হয়নি।
এদিকে আকস্মিক বয়ে যাওয়া ঝড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জাজিরা উপজেলার মির্জা হজরত আলী হাই স্কুলের একটি টিনের ঘর, বিলাশপুর ইউনিয়নে পাঁচটি বসত ঘর, নড়িয়া পৌরসভায় চারটি বসত ঘর ও ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়নের ফতেজঙ্গপুর বাজারের চারটি দোকান ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া শতাধিক গাছপালা বিনষ্ট হয়েছে। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন-উল-হাসান জানান, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে।
মানিকগঞ্জ
কালবৈশাখী ঝড়ে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নে গাছের চাপায় শারমিন আক্তার নামের চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী নিহত হয়েছে। কলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ওই ইউনিয়নের বেকুওয়াইল গ্রামের ঝরে শারমিনের বাবা আবু হানিফ (৩৫) ও একই এলাকার হোসেন (২৫) গাছের চাপায় আহত হন।
কলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন আরও জানান, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও বিপুল সংখ্যক গাছপালা নষ্ট হয়েছে।
Development by: webnewsdesign.com