অবশেষে পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিক ইটালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলমের হাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচাপতির এজলাসে দেখা যায় তাকে।
মাকসুদুল আলমকে দ্রুত জমির রেজিস্ট্রেশন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট্রের নামে সম্পন্ন করে দিতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। মাকসুদুল আলম বলেন, আমি সন্তুষ্ট। ১৯৭২ সাল থেকে আমি অপেক্ষায় ছিলাম। আজ তার অবসান হলো।
আদালত এ বিষয়টি নিষ্পত্তি করে আদেশ দেওয়ার জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি পরবর্তী তারিখ ধার্য করা করেছেন। এদিন মাকসুদুল আলমের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এবং সরকারের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
উল্লেখ্য, জানা যায়, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে একসময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। পরে ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনও সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাগ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তবে হাইকোর্টের এই রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেন।
এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করে ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। পরে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই প্রতিবেদন অনুসারে মুন সিনেমা হল মালিককে এই টাকা পরিশোধে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
Development by: webnewsdesign.com