ব্রেকিং

x

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন বন্ধুর পরিবারে শোকের মাতম

রবিবার, ০৬ মার্চ ২০২২ | ১১:৫৯ অপরাহ্ণ | 132 বার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন বন্ধুর পরিবারে শোকের মাতম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন বন্ধুর জানাজা আজ সকাল ১০টায় শহরের নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় ছবি: সংগৃহীত

এনামুল, সাইফুল ও নাজেল ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। কলেজে পড়ার সময় তাঁদের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। একসঙ্গেই চলাফেরা ও ঘোরাঘুরি করতেন তাঁরা। সর্বশেষ তিন বন্ধু মিল একসঙ্গে মোটরসাইকেলে বেড়াতে যান। কিন্তু তাঁদের আর ঘরে ফেরা হলো না। সড়ক দুর্ঘটনায় চলেও গেলেন একসঙ্গে। তিনজনের জানাজাও একসঙ্গে হয়েছে। তাঁদের হারিয়ে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।

নিহত তিন বন্ধু হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা এনামুল হক (২৩), দাতিয়ারার সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে নাজিম (২২) ও আশুগঞ্জ উপজেলার বগইরের নাজেল মাহমুদ খান (২৪)। এনামুল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সাইফুলও একই কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী ও নাজেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এনামুল ভালো ক্রিকেট খেলতেন। বিভাগীয় পর্যায়েও খেলেছেন। সাইফুল ও নাজেল ব্যাডমিন্টন খেলতেন।



সাইফুলের বাবা মামুন ভূঁইয়া বলেন, ‘কয়েক দিন আগে অসুস্থতার জন্য ঢাকার ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। সাইফুল আমার সঙ্গে ছিল। আখাউড়ার ছতুরা শরীফে বাড়ির নির্মাণকাজ চলছিল। ছেলে আমাকে শনিবার বিকেলে শহরের দাতিয়ারার বাসায় নিয়ে আসে। রোববার আমাকে চিকিৎসক দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ছেলে আমাদের ছেড়ে একেবারে চলে গেল।’

এনামুল হকের মামাতো ভাই সাজেদুল হাসান বলেন, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে এনামুল দ্বিতীয়। এনামুল ভালো ক্রিকেটার ছিলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতেন। তিনি বলেন, গ্রিসে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন এনামুল। সামনের মাসেই তাঁর গ্রিসে যাওয়ার কথা ছিল।

নাজেলের বাবা সৌদিপ্রবাসী ওমর আলী বলেন, দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নাজেল সবার ছোট। রোমানিয়ায় এক আত্মীয়ের কাছে ছেলের পাসপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তিনি ওয়ার্ক পারমিটও পেয়েছিলেন। আগামী মাসে এক আত্মীয়ের ভারতে এসে ছেলের ভিসার যাবতীয় কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের কাঁদিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রাইসা আফরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তাঁদের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু এনামুল পরীক্ষায় অংশ নেননি। পরীক্ষা শেষে ভেবেছিলাম, বন্ধুর সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু আর কথা বলা হলো না। এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জেলা শহর থেকে একটি মোটরসাইকেলে তিন বন্ধু আগরতলা-সুলতানপুর সড়ক দিয়ে চিনাইরের দিকে যাচ্ছিলেন। সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাইফুল ও নাজেল নিহত হন। সাইফুল ও নাজেলের লাশ ও গুরুতর আহত এনামুলকে উদ্ধার করে স্থানীয় ব্যক্তিরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা খারাপ হওয়ায় এনামুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকেরা। সেখানে শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে তিনি মারা যান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হন। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে পালিয়ে যাওয়ায় চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি। রোববার সকাল ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে একসঙ্গে তিন বন্ধুর জানাজা হয়। তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়েছে।

নামাজের সময়সূচি

[prayer_time]

Development by: webnewsdesign.com