শীতের রাত। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির এই রাতে দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়েছিল রাজধানীর কালশীর বাউনিয়া বাঁধ এলাকার বস্তির বাসিন্দারা। কিন্তু মধ্যরাতের আকস্মিক আগুনে সব ছেড়ে হাতের কাছে যা ছিল তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বস্তিবাসী। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বস্তির দুই শতাধিক ঘর। মধ্যরাতেই সব হারিয়ে বস্তির ছয় শতাধিক বাসিন্দার আশ্রয় এখন খোলা আকাশের নিচে।
কালশী বাউনিয়া বাঁধ এলাকার বস্তিতে আগুন লাগে মূলত রাত সোয়ার ১২টার পরপরই। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুনের খবর পেয়ে পাঁচটি ইউনিট পাঠানো হয়। পরে আরও পাঠানো হয় ছয়টি ইউনিট।
রাত সোয়া ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে যাওয়া বস্তিটির দুই শতাধিক ঘরের ছয় শতাধিক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছে বস্তির বাইরে সড়কে খোলা আকাশের নিচে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কান্নার রোল পড়ে বস্তিবাসীর মধ্যে। কারও সন্তানের খোঁজ মিলছিল না, কারও গবাদিপশু। সুমন নামে এক বাসিন্দা বলেন, কে কখন কীভাবে বের হইছে ঠিক নাই। সব হারায়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির রাতেই এখন খোলা আকাশে নিচে থাকতে হচ্ছে।
রবিউল নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, সামনেই ছিলাম, আগুন দেখার পর বাইরে আসছি। কিন্তু কিচ্ছু আনতে পারি নাই। শুধু জানডা নিয়া দৌড় দিছি।
নান্নু মিয়া নামে আরেকজন বলেন, রাতে ঘুমাইছিলাম। হঠাৎ দোকানদার আকতার মিয়ার চিত্কার। আগুন আর ধোঁয়া দেইখা দৌড় দিছি। আগুনে পুড়ে সব শ্যাষ। এখন কোথায় যাব, কই থাকব কিচ্ছু জানি না।
বস্তিবাসী জানান, বস্তিটিতে ৮০টির মতো দোকানসহ তিন শতাধিক ঘর রয়েছে। নিচে খাল। খালের ওপর অধিকাংশই কাঠের টং ঘর ও টিনের ঘর বানানো। ছোট ছোট প্রতিটি ঘরে বসবাস ছিল দুজনের বেশি বাসিন্দা। বাসিন্দাদের অধিকাংশই রিকশা-ভ্যানচালক। কেউবা ভাঙারির ব্যবসা করেন, ফেরি করে প্লাস্টিক সামগ্রী ও পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করেন। আগুনে দোকানসহ ঘর পুড়েছে দুই শতাধিক।
সেলিম নামে এক বাসিন্দা বলেন, একটি ভাঙারির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। আশপাশের একাধিক দোকানে রয়েছে প্লাস্টিক সামগ্রী। যে কারণে দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলো প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে আগুন নির্বাপণে আসে ফায়ার সার্ভিস। আবার আধাঘণ্টা পরই পানি শেষ হয়ে গেলে আগুন বেড়ে যায়।
রাত সোয়া ২টার দিকে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সালেহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা আগুনের কারণ জানতে পারিনি। এটা বস্তি জেনেই এসেছি। এখানে ভাঙারি দোকান কিংবা প্লাস্টিকজাতীয় কিছু রয়েছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নই। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর আমরা পাইনি। আগুন পুরোপরি নির্বাপণের পর তল্লাশি চালানো হবে। আগুনের কারণ তালাশে করা হবে তদন্ত কমিটি। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার তদন্ত করে বলা যাবে।
তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৬ আসন) আলহাজ মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, বস্তিটিতে লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে স্থানীয় আরমান স্কুলে। গরম কাপড়ের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সকালের খাবারের ব্যবস্থাও করা হবে। যতদিন পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসন না হয় ততোদিন তাদের দায়িত্ব আমার।
Development by: webnewsdesign.com