বিবাহ অনুষ্ঠান পরবর্তী সকল আনন্দ উৎসবই নিমিশেষ শেষ। এখন পরিবার পরিজন আর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেবল আহাজারি। পরিবারে যে সদস্যরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন তারা এই ভয়বহ দূর্ঘটনার স্মরণে মূচাঁ যাচ্ছেন। বোবা কান্নায় বিবাহ অনুষ্ঠানের নানা স্মৃতি কথা বলে আহাজারি করছেন আর চোখের জল ফেলছেন। কোন শান্তনাই থামাতে পারছেনা তাদের আপনজন হারানো ব্যথা। শোকে বিহবল পুরো শহরের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্ধারা। ওই ব্যবসায়ী পরিবারের এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাতুর সবাই। তারা নির্দিষ্ট সময় দোকান পাঠ বন্ধ রেখে শোক প্রকাশ করেছেন। সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন। শহরের মধ্যে এই প্রথম এমন মর্মান্তি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শহর জুড়েই স্থানীয় বাসিন্ধাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা।
যে ভাবে ঘটে ওই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
মৌলভীবাজার শহরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ঘটনাস্থলেই ৫জন পুড়ে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২ জন। এই মনান্তিক ঘটনায় জেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০ টার দিকে। মৌলভীবাজার শহরের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এম সাইফুর রহমান রোডের পিংকি সু স্টোরে। ওই ঘটনার পর আশপাশের ব্যবসায়ীসহ পুরো শহরে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসীন্ধারা দোকানপাট বন্ধ রেখে অগ্নি নিবাপন কাজে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। দোকানের সাথে সংযুক্ত উপরে বাসার গ্যাস লাইনের গ্যাস লিংক অথবা বিদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারনা করছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এঘটনার নেপথ্যের কারণ উদঘাটন ও ভবিষ্যতে এ ধরনের দূর্ঘটনা রোধে ৭ সদস্যের পৃথক ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ সৎকারের জন্য ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে প্রদান করা হয়েছে। উদ্ধারকারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান মুহুর্তে আগুন বাসার চর্তুদিকে ছডিয়ে পড়ে। আগুনে একই পরিবারের ৫জন নিহত হন। নিহতরা হলো সুভাষ রায় (৬৩) তার ভাই ওই ঘটনায় আহত মনা রায়ের স্ত্রী দীপ্তি রায় (৪৫),সুভাষ রায়ের মেয়ে পিয়া রায় (১৯), সুভাষ রায়ের শ্যালক সজল রায়ের স্ত্রী দীপা রায় (৪৫) ও মেয়ে বৈশাখী রায় (২ বছর ৮ মাস)। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন মনা রায় তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সুভাষ রায়ের গ্রামের বাড়ি মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামে। তবে তারা দীর্ঘদিন থেকে তাদের মালিকানাধীন ও বাসায় ২য় তলায় বসবাস করে আসছেন ও নীচ তলায় ব্যবসা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান সকালে মৌলভীবাজার শহরের এম সাইফুর রহমান রোড়ের পিংকি সু স্টোরে প্রচন্ড আগুনের ধুয়া দেখতে পান। এই সময় ওই দোকানের সার্টার বন্ধ ছিল। ওই দোকানের ভেতর দিয়েই উপর তলায় বসবাস রত পরিবারের যাতায়াতের সিড়িঁ ছিল। ওখানে ২য় তলার টিন সেডের আধাপাকা পাকা পূরাতন ঘরে বসবাস ছিল সুভাষ ও মনা রায়ের পরিবারের। হঠাৎ ধুয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস বাহিনীর ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে তিন ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
নিহতদের আত্মীয় স্বজনরা জানান গেল বুধবার সুভাষ রায়ের বড় মেয়ে স্কুল শিক্ষক প্রিয়াংকা রায় পিংকির বিবাহ ছিল গেল বুধবার। আর তার বৌভাত ছিল সোমবার। বিবাহের ওই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে আত্নীয় স্বজন ও পরিবারের সকল সদস্যরা ওই বাসাতে জড়ো হয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানের কারনে অনেকেই দেরী করে ঘুমাতে যান তাই দু একজন ছাড়া ওই অগ্নিকান্ডের সময় সবাই ঘুমন্ত ছিলেন।
উদ্ধারকারীরা জানান প্রথমে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পরে আগুনে পুড়ে তারা নিহত হন। আগুনে পুড়ার কারনে তাদেরকে সনাক্ত করা যাচ্ছিলনা। তারা জানান নীচ তলার দোকানের ভেতর দিয়ে উপর তলায় উঠানামার সিড়িঁ ছিল। ওই সিড়িঁ ও উপর তলার ছিল কাট ও টিনের তৈরী। তাছাড়া দোকানে জুতা, খেলনা ও প্লাষ্টিক সামগ্রী থাকায় আগুন দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুতের সংযোগ দ্রুত বন্ধ করা গেলেও গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও পাইপে জমাকৃত গ্যাসের কারনে তা বন্ধ হতে কিছুটা দেরী হয়। পানি ও বালু দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্ঠা করা হয়। ততক্ষনে পুড়ে ছাই হয় ওই পরিবারের ৫ জন। ঘটনার সময় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন মনা রায় (৫৬), সঞ্জয় রায় (২০), শুভ রায় (১৮), মনা রায়ের বড় ভাইয়ের বিধবা স্ত্রী। এছাড়া পরিবারে অন্যান্য সদস্যরা প্রিংকা পিংকির জামাইর বাড়িতে থাকায় তারা প্রাণে বেচেঁ যান।
উদ্ধারকর্মী মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো: হাসান মাহদী ও কমল পাল বলেন ছোট্ট মেয়ে বৈশাখী রায় (২ বছর ৮ মাস) আগুনে পুড়তে দেখে তারা তাকে উদ্ধারের জন্য চিৎকার দিয়ে বলেছিলেন । কিন্তু ধূয়ার কারনে অনেকেই বলেছিলেন এটা হয়ত পতুল হবে। পরে তার আগুনে পুড়া নিথর দেহ পাওয়া গেল। বৈশাখী অগ্নিকান্ডের সময় ঘরে বাহিরে চলে আসলেও আবার ঘরে ফিরে গেলে সেও পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এসময় ঘটনাস্থলে এসে দিক নির্দেশনা দিয়ে সাবির্ক সহযোগিতা করেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন,ফায়ার সার্ভিস, মৌলভীবাজার পৌরসভার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিজনেস ফোরাম, চেম্বার অব কর্মাসের উর্ধতন কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
জেলা প্রশাসনের প্রেসব্রিফিং
মৌলভীবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের একই পরিবারে ৫ জন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেসব্রিফিং দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিণ ওই মর্মান্তিক ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এধরনের দূর্ঘটনা রোধে করণীয় জানতে সকলের সহযোগিতা চান। ওই অগ্নি কান্ডের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তানিয়া সুলতানাকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিবে। এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের সরকারের তরফে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। প্রেসব্রিফিংয়ের সময় জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেষ্ট্রিট তানিয়া সুলতানা, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, বিজনেস ফোরাম ও চেম্বার অব কর্মাসের নেতৃবৃন্দ,পৌর কাউন্সির ও গণমাধ্যম কর্মীসহ শহরের নানা শ্রেণী পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। মৌলভীবাজার পৌর শহরের সৈয়ারপুর মহা শশ্মান ঘাটে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিহতদের মরদেহ শবদাহ করা হয় নিহতদের নিকট আত্মীয় পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী জানান
Development by: webnewsdesign.com