নাটোর শহরের আলাইপুরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ কর্মকর্তা, বিএনপির নেতা–কর্মীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে জেলা বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে আজ সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
নাটোর থানা–পুলিশ, জেলা বিএনপি ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ১০টায় সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির নেতা–কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে পুলিশ কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে নেতা–কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে যান। প্রথমে নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করলে নেতা–কর্মীরা পিছিয়ে যান। পরে নেতা–কর্মীরা নির্মাণকাজের জন্য জড়ো করে রাখা ইট নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছুড়তে থাকেন। পুলিশ অন্তত ২০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে অলিগলিতে ঢুকে পড়েন।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের সেলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশের দাবি, বিএনপির নেতা–কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনসুর রহমানসহ অন্তত তিন পুলিশ আহত হয়েছেন। মাথায় আঘাত পাওয়া ওসি মনসুরকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের নাটোর প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকার। সদর হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে
এদিকে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দৈনিক যুগান্তরের নাটোর প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকারসহ অন্তত চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শহিদুলকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজের ভাষ্য, পুলিশ সুপারকে জানিয়ে আজ সকালে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শুরু করা হয়। পুলিশের বাধায় নেতা–কর্মীরা কর্মসূচিস্থলে ঢুকতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে তাঁরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে বসে পড়লে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে তাঁদের নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে আহত নাটোর সদর থানার ওসি মনসুর রহমানকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়ছবি: প্রথম আলো
জেলার পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীরা একতরফাভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। ওসিসহ কয়েকজন আহত হলে পুলিশ আত্মরক্ষার জন্য কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ব্যাপারে মামলা হবে।
এদিকে দুপুর ১২টা থেকে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক জুবায়ের ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রনি খাতুন সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর আলাইপুরের বাসার চারতলায় অবস্থান করছেন। সেখানে দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ আছেন। তাঁদের সঙ্গে কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিকেশ পাঁচটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল।
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে আটকের কথা স্বীকার করেছে। এই চারজন হলেন জেলা যুবদলের সভাপতি এ হাই তালুকদার, বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল হক, জেলা বিএনপি কার্যালয়ের অফিস সহকারী আসলাম উদ্দিন ও কেয়ারটেকার আইনুদ্দিন। তাঁদের জেলা বিএনপির কার্যালয়ের ভেতর থেকে আটক করা হয়েছে। তবে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা প্রায় ১৫ জন নারী কর্মীকে তিন ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
Development by: webnewsdesign.com