বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ড অতি উৎসাহীদের কারণে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়। তিনি বলেছেন, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে পেটানোর নির্দেশনা কখনও ছাত্রলীগ দেয় না। ছাত্রলীগ কখনও এ ধরনের রাজনীতিতে বিশ্বাসও করে না।’
সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করা হবে।
এর আগে এক বিবৃতিতে ছাত্রলীগ এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠনের কথা জানায়।
আল-নাহিয়ান জয় বলেন, ‘এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা ইতোমধ্যে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছি। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত যে একজন শিক্ষার্থী ভাই মারা গেছেন। এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা অতি উৎসাহী। তবে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার কারণে কেন্দ্রীয় দুই নেতার সমন্বয়ে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার সময় দেওয়া হয়েছে।’
জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার তো করবোই, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে, তাদের গ্রেফতার করুন বা গ্রেফতার হয়ে থাকলে আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করুন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, ‘কেউ অন্য দল বা মতের হতেই পারে। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে পেটানোর নির্দেশনা কখনও ছাত্রলীগ দেয় না। ছাত্রলীগ কখনও এ ধরনের রাজনীতিতে বিশ্বাসও করে না। অন্যায়কারীদের কোনও জায়গা ছাত্রলীগে নেই। যেই হোক না কেন আমরা কোনও অন্যায়কারী, দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দিই না।’
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবো, বিষয়টি তেমন নয়। তবে প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা করে ঘটনায় যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’
অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তারা আবার ফিরে আসে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরস্কৃতও হয়। এবার এর পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে কিনা জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘গুরুতর অপরাধ করলে কখনও তাদের ক্ষমা করা হয় না। তবে অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ অনিচ্ছাকৃত ভুল করে থাকেন এবং ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা খুবই সামান্য। এক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে তাদের লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। আর লঘু অপরাধ হলে তাদের ক্ষেত্রে একটা পর্যায়ে ছাড় পেতে পারেন।’
ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’-নীতি ও তার সরকারের উন্নয়নের যে ধারা, সেই ধারায় ছাত্রলীগের কোনও কর্মকাণ্ড যেন বাধাগ্রস্ত না করে তার জন্য আমরা সতর্ক থাকবো। ছাত্র নেতৃত্বের গুণগত মান যেন সব সময় অক্ষুণ্ন থাকে, এজন্য আমরা সব সময় কাজ করবো।’
প্রসঙ্গত, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কিছু নেতাকর্মী রবিবার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে মারধর করে। এরপর দিনগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
Development by: webnewsdesign.com