থাই শব্দ অনুসারে ইয়াবার মূল অর্থ বুঝায় ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ঔষধ। এছাড়াও ইয়াবাকে বিভিন্ন নামে অবিহিত করা হয়, এর মধ্যে ক্রেজি মেডিসিন, হিটলারস্ ড্রাগ, সাবু, বুলবুলিয়া প্রধান নামগুলো উল্লেখযোগ্য। ইয়াবার আসল নামের বাইরেও এটি বিক্রির জন্যও রয়েছে নানা গোপনীয় সাংকেতিক নাম। দেশের বিভিন্ন উপজেলার শহর অঞ্চলে কিংবা গ্রামাঞ্চলে ইয়াবাকে বাবা, সিমকার্ড ও প্যারাসিটামল, সিগারেট, চম্পা, চম্পা সুপার, আর ৭০, আর ৮০, আর ৯০, জিপি, ঝাকানাকা, ডাব্লিউ ওয়াই, এনসিআরএস, ডাব্লিউ এক্স ইত্যাদি নামেও অভিহিত করে ব্যবহারকারীরা।
প্রথমে জীবনরক্ষাকারী ঔষধ হিসেবেই প্রথম ১৯১৯ সালে জাপানিরা ইয়াবর উপাদান তৈরির পরিকল্পনা করে। এছাড়াও কথিত রয়েছে, ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মান একনায়ক এডলফ হিটলার তার মেডিকেল চিফকে আদেশ দেন এজাতীয় ঔষধ তৈরি জন্য, যাতে করে এটি সেবন করে দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ করলেও যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের ক্লান্তি না আসে।হিটলারের এমন নির্দেশে জার্মান কেমিস্টরা এটি তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তখন এটির নাম ছিল ‘পারভিটিন’।
একদায় ট্যাবলেটটি থাইল্যান্ডে প্রকাশ্যে বিক্রি হত। থাই ট্রাক চালকেরা রাতে গাড়ি চালানোর ক্লান্তি ভুলে থাকার জন্য এটা ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে ইয়াবাসেবী ট্রাক ও বাস চালকরা বেশ কয়েকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মখীন হলে থাই সরকার ১৯৭০ সালে এ জাতীয় উত্তেজক ঔষধের বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে ১৯৯৭ সালে।পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসতে শুরু করে। এই ট্যাবলেটের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হবার কারণে প্রথমদিকে প্রধানত উচ্চবিত্তদের মাঝেই এটি সেবনের বিস্তার লাভ করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে নতুন নেশার আনন্দ নিতে কুমিল্লা বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের উঠতি বয়সী তরুণ তরুণী, গায়ক গায়িকা, নায়ক নায়িকারা এ ড্রাগ সেবন করতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা খেলে স্মরণশক্তি কমে যায়, সিদ্ধান্তহীনতা শুরু হয় এবং কারও কারও ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, এমনকি অনেকে আত্মহত্যাও করে থাকে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, তিন ধরনের ইয়াবা রয়েছে এক শ্রেণির ইয়াবা ট্যাবলেট সবুজ বা গোলাপী রঙের হয়ে থাকে। এর ঘ্রাণ অনেকটা বিস্কুটের মত। ২য় শ্রেণির ইয়াবার দাম তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু ইহা নেশাসৃষ্টিতে অধিক ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে থাকে। ৩য় শ্রেণির ট্যাবলেটি দামে অনেক কম এবং নেশায় আসক্তদের নিকট এটি ভেজাল হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও ইয়াবার গায়ে ডাব্লিউ ওয়াই লেখা থাকে। ওয়াই লেখার ধরন দীর্ঘ হলে এবং ইয়াবার রঙ পুরোপুরি গোলাপী হলে ধারণা করা হয় ভাল মানের।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইয়াবা গ্রহণকারীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
অন্যদিকে বিশেষ সূত্রে জানা যায়, কিছু অসাধু চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাজার থেকে কম মূল্যের উচ্চমাত্রার জন্মবিরতিকরণ ট্যাবলেট লাল রং করে ইয়াবা হিসেবে বিক্রি করছে । এ নকল ইয়াবা খেয়ে বন্ধ্যাত্বসহ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে ইয়াবা গ্রহণকারী তরুণ-তরুণীরা।
ইয়াবা খেলে সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনা হলেও, অনিদ্রা, খিটখিটে ভাব ও আগ্রাসী প্রবণতা, ক্ষুধা কমে যাওয়া ও বমি ভাব, ঘাম, কান-মুখ লাল হয়ে যাওয়া এবং যৌন মিলনের ইচ্ছা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় ।বৃদ্ধি পায় হূৎস্পন্দনের গতি, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের তাপমাত্রা।কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকেন।
কুমিল্লা উপজেলার চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গোপন সংবাদের বিত্তিত্বে জানা জায়, ইয়াবা সেবন ও বিক্রির বাজার চলচ্ছে রমরমা, এদের হাত অনেক শক্তিশালী, ক্ষমতবান বিভিন্ন রাজনীতিদের সহায়তায় ঘুরে বেড়ায় আড়ালে।
অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে আপনার সন্তানদের প্রতি যত্নবান হন। টাকা চাওয়া মাত্রই সন্তানকে টাকা না দিয়ে বন্ধুর মতো সপ্তাহে একদিন হলেও সময় দিন। হলেও সময় দিন। মনে রাখবেন, আপনার সন্তান যদি দীর্ঘদিন ইয়াবা সেবনে আসক্ত হয়ে যায়, প্রচুর টাকা ব্যয় করেও তাকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাকে হয়তো আংশিক সুস্থ করা যাবে, কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার সন্তান থাকবে জীবন্ত একটি লাশের মতো। আপনার তখন কিছুই করার থাকবে না।
ইয়াবার প্রতিরোধে সরকার, প্রসাশনের আইনি ব্যবস্থা ও সমাজের সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে আমাদের দেশের যুব সমাজকে রক্ষা করা বাঞ্চনীয়।
Development by: webnewsdesign.com