করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে গিয়ে পৃথিবী ক্রমে অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটি রোগ ঠেকানোর ক্ষেত্রে পুরো বিশ্ব যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা নজিরবিহীন। তবে এর শেষ কোথায়? মানুষ কবে নাগাদ প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে?
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আশা করছেন আগামী তিন মাসের মধ্যে ‘করোনাভাইরাসের ঢেউ’ উল্টোপথে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হবে দেশটি। তবে এ সময়ের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। সম্ভবত কয়েক বছর লাগতে পারে।
বলা হচ্ছে, যেভাবে বড় বড় শহর লকডাউন বা অবরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে এবং মানুষের প্রতিদিনের চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে, সেটি দীর্ঘমেয়াদে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশগুলোকে অবশ্যই কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। তবে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে করোনাভাইরাসের বিস্তার আপাতত অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ তুলে দিলে সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।
স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কৌশল কী হবে তা নিয়ে বড় বড় জটিলতা রয়েছে। এ নিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশের হাতেই কোনো কৌশল নেই। এই কৌশল ঠিক করা বড় ধরনের বৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ। তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে তিনটি উপায় আছে। টিকা দেওয়া, বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের ফলে তাদের মধ্যে এ নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে এবং তৃতীয় উপায় হচ্ছে স্থায়ীভাবে মানুষ এবং সমাজের আচার-আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসা।
ধারণা করা হচ্ছে, টিকা আসতে ১২ থেকে ১৮ মাস লাগবে। এই টিকা গ্রহণ করলে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এলেও তারা অসুস্থ হবে না। যত বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে ততই ভালো। যদি মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়, তাহলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে না। করোনাভাইরাসের টিকা আবিস্কারের জন্য বেশ দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। তবে এটি সফল হবে কিনা- এর নিশ্চয়তা নেই।
প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য যুক্তরাজ্য যে কৌশল নিয়েছে সেটি হচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা, যাতে হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ না হয়ে পড়ে। হাসপাতালগুলো রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেলে আইসিইউতে জায়গা পাওয়া যাবে না। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্সি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কখন কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া সম্ভব নয়।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন বলেন, আমরা যদি দুই বছরের বেশি সময় সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে রাখতে পারি তাহলে তাহলে দেশের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে। এর ফলে স্বাভাবিক নিয়মে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। তবে অতীতে করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরনের যেসব সংক্রমণ হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুব ভালো কাজ করেনি।
বিকল্প কী?
অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ বলেন, তৃতীয় কৌশলটি হচ্ছে আমাদের আচার-আচরণে স্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে আসা, যার ফলে সংক্রমণের মাত্রা সীমিত থাকবে। তিনি আরও বলেন, কভিড-১৯-এর ওষুধ আবিস্কার করা সম্ভব হলে মানুষের মাঝে এর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সময় তা প্রয়োগ করলে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা যাবে।
তবে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসাবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেন, ‘টিকাই হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে সমাধান। আমরা আশা করছি এটা যত দ্রুত সম্ভব হবে।’ খবর: বিবিসি
Development by: webnewsdesign.com