আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করা হয়েছে। এবার সেই তালিকা কেন্দ্র থেকে জেলার নেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোর) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলি সভা শেষে এ কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।
তিনি বলেন, বিতর্কিত কোনও ব্যক্তি যাতে বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলনে কমিটিতে জায়গা করে নিতে না পারে, সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। নেতা-কর্মীদের সেভাবেই দিক-নির্দেশনা দেয়া আছে।
নেত্রী তার নিজস্ব কিছু লোক এবং গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট- সবমিলিয়ে খোঁজ নিয়ে একটি তালিকা করেছেন, সেই তালিকা পার্টি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি নিজেও আমার জেলার নেতাদের সাথে সেই বিতর্কিত তালিকা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা এই ব্যাপারে সতর্ক, যাতে সেই তালিকায় থাকা বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারী কাউন্সিলে কোনও ধরনের জায়গা না পায়।
এ সময় বিভিন্ন জেলা ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি করার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। গঠনতন্ত্রে যেভাবে কমিটি করার দিক-নির্দেশনা আছে সে অনুযায়ী কমিটি করতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে নির্দেশনা যাবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কমিশনের শিডিউলের ওপর নির্ভর করছে এই তিন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন।
উপজেলার বিদ্রোহীরা তৃণমূলের নেতৃত্বে আসতে পারবে কি- না এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেটা কেস টু কেস বিবেচনা করা হবে।
সম্পাদকমণ্ডলির সভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আমার বিভাগীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ারও করেছি। তারা এই তালিকা নিয়ে বিভিন্ন শাখা ও সহযোগী সংগঠনের যে সম্মেলন হচ্ছে, সেখানে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারী হিসেবে যাদের নাম আছে, তারা যেনো কমিটিতে আসতে না পারে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকবে এবং ব্যবস্থা নেবে।
বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের যে তালিকা করা হয়েছে সেখানে কতজনের নাম আছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সব বিভাগেই কমবেশি আছে। তবে নির্দিষ্টি সংখ্যা বলতে পারছি না। পরের মিটিংয়ে বলব।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনে গঠনতন্ত্রে বিধান মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জেলা শাখাগুলোকে একটি নির্দেশনামূলক সার্কুলার দিতে যাচ্ছি- দলের গঠনতন্ত্রের কোনো প্রকার ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একদম ওয়ার্ড পর্যন্ত উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, মহানগর, জেলা সর্ব ক্ষেত্রেই দলের গঠনতন্ত্র পালন করতে হবে।
গঠনতন্ত্রে বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড এবং পদক্ষেপ নেয়া যাবে না। নতুন কমিটি করার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। গঠনতন্ত্রের বিধান মেনে কমিটির আকার করতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষ’কে সামনে রেখে একটি কালারফুল, বর্ণাঢ্য, সুশৃঙ্খল ও স্বতঃস্ফূর্ত সম্মেলন হবে। টেকনোলজি ও ট্রেডিশনের সমন্বয় রেখে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে সময় উপযোগী নেতৃত্ব উপহার দেব।
মেয়াদোত্তীর্ন ২৭টি জেলায় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, এসব সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যাবেন, সেভাবে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বেশকিছু উপজেলায় মেয়াদ্দোত্তীর্ন কমিটির আছে। সেগুলোরও সম্মেলন প্রস্তুতি চলছে। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়সহ সারাদেশের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে পুরোদমে তৃণমূল পর্যন্ত তাদের সাংগঠনিক শক্তি বিস্তারে সম্মেলনের দিকে নজর দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের জানান, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগের সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একই মঞ্চে হবে। সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা এই বিষয়ে দেখভাল করছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে করা উপকমিটিগুলো সভা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থ কমিটির বাজেট ঠিক করে ফেলেছেন। পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে তারা বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন। প্রস্তুতি থেমে নেই, সম্মেলন সঠিক সময়ে হবে। ২০ ডিসেম্বর উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিল অধিবেশন।
দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদকের বিরুদ্ধে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে সেটি চলমান থাকবে জানিয়ে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন কাদের।
গত ৩ বছরের যতগুলো প্রতিনিধি সভা হয়েছে এতো প্রতিনিধি সভা আওয়ামী লীগের ইতিহাসে হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির এই সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এই সময়ে রোডমার্চ, ট্রেন মার্চ করেছি। ৫টি সিটি করপোরশন নির্বাচন ফেস করেছি। সিলেট ছাড়া বাকি সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে আমরা জিতেছি। এ সময় স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে আমরা বিজয়ী হয়েছি। ২২ বছর পর খুলনা মহানগরের প্রথম কমিটি হয়েছে। অন্তত ৩০টি কমিটির পূর্নাঙ্গ করা হয়েছে যেখানে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিল। এরপরও এই কমিটি কিছুই করতে পারেনি বলে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়।
Development by: webnewsdesign.com