ব্রেকিং

x

‘আমাদের সুখ সরকারের সইল না’

শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১ | ১১:২২ অপরাহ্ণ | 118 বার

‘আমাদের সুখ সরকারের সইল না’

ঘরে সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল শেষ। দুপুরের খাবারের চিন্তা পেয়ে বসল সাবেত্রীকে। সকাল সকাল প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধারে কিছু টাকা নিয়ে ছুটলেন টিসিবির পয়েন্টে। লাইনে বাজারের ব্যাগ রেখে নিজের জায়গাটি দখলে রাখলেন। ঘণ্টা চারেক অপেক্ষার পর এলো পণ্যভর্তি ট্রাক। তবে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে পড়লেন বিপাকে। কারণ, সদাইয়ের দামের চেয়ে তাঁর কাছে ৩০ টাকা কম আছে । এদিক-ওদিক তাকালেন সাবেত্রী। এরপর মাথাটা নিচু করে আস্তে আস্তে বাড়ি ফিরে গেলেন তিনি।

শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের ওয়াপদা কলোনি এলাকার টিসিবির পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে।

টিসিবির পরিবেশক ও ক্রেতা সূত্রে জানা গেছে, টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেল কার্যক্রমে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা, চিনি ও ডাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৩০ টাকায় কেনা যেত। গত বুধবার থেকে সয়াবিন তেল ও মসুর ডালের দাম বাড়িয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করে টিসিবি। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১১০ টাকা আর ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পণ্য কিনতে এসে বাড়তি দাম পরিশোধ করতে না পেরে খালি হাতে ফিরেছেন অনেক ক্রেতা।

ফিরে যাওয়ার সময় সাবেত্রী জানান, শহরের বাসাবাড়িতে কাপড়চোপড় ধোয়া ও ঘর মোছার কাজ করেন তিনি। এসব করে মাসের শেষে আড়াই হাজার টাকা পান। আর তা দিয়েই স্বামী-স্ত্রীর চলে যাচ্ছে। তাঁরা যাতে সহজেই পণ্য কেনার সুযোগ পান, এ জন্যই সকাল থেকে ট্রাক আসার নির্ধারিত স্থানে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। তাঁদের কেউ কেউ সকাল সাতটা বা তারও আগে সেখানে যান। পরে সেখান থেকে পণ্যের স্লিপ নিয়ে টাকা পরিশোধ করে পছন্দের পণ্য কিনে নেন।

সে সময় সাবেত্রীর পাশে দাঁড়ানো হাজেরা বেগম বলেন, দুই লিটার সয়াবিন তেল ও দুই কেজি মসুর ডালের টাকা হাতে নিয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেত্রী। কিন্তু টাকা পরিশোধের সময় সাবেত্রীর কাছে ২ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২২০ টাকা ও ২ কেজি মসুর ডালের দাম ১২০ টাকা চান বিক্রয়কর্মী। বাড়তি দাম চাওয়ায় কারণ জানতে বিক্রয়কর্মীরা সাবেত্রীকে বলেন, সয়াবিন তেল ও ডালের দাম বেড়ে গেছে। বিক্রয়কর্মীর কথা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না তিনি। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা শেষে ট্রাকে সাঁটানো ব্যানারে পণ্যের মূল্য দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান তিনি।

সাবেত্রী ট্রাকের দিকে হাত দেখিয়ে বলেন, ‘ওখান থেকে জিনিস কেনার উপায় আছে? বাজারে সব জিনিসেরই দাম বেড়ে গেছে। এখানেই (টিসিবি) দাম একটু কম পেতাম বলে সকাল থেকে এখানে বসে থাকতাম। কষ্টের মধ্যেও এখান থেকে তেল, ডাল ও চিনি কিনে দিন চলে যাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের সুখ সরকারের সইল না।’

সাবেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেখা গেছে, সৈয়দপুর সেতু এলাকার হজরত আলী, শাহপাড়ার রওশন আরা, চারমারি পাড়ার ফেরদৌসী বেগমও বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে না পেরে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।

টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দোকান কর্মচারী রমজান আলী। তিনি দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন খালপাড়া এলাকায়। তিনি বলেন, দুই বছরে বেতন এক টাকাও বাড়েনি। কিন্তু সবকিছুরই দাম বেড়েছে। এখন জীবন চালাতে অনেক কসরত করতে হচ্ছে।

রমজান টিসিবির ট্রাক থেকে দুই লিটার তেল এবং দুই কেজি করে চিনি ও ডাল কেনেন। এতে তাঁর ব্যয় হয় ৪৫০ টাকা। তেল ও ডালের দাম বাড়ানোর কারণে তাঁকে বেশি দিতে হয় ৩০ টাকা।

শনিবার শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা ও মাঝারি দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারের তুলনায় দাম কম হওয়ায় টিসিবির ট্রাকের পেছনে সব সময়ই ভিড় থাকে।

টিসিবির পরিবেশক মেসার্স মুসলিমা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকার মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘টিসিবির রংপুর কার্যালয় থেকে ট্রাকে বিক্রির জন্য একেক দিন ভিন্ন পরিমাণে পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। শনিবার তাঁদের ৪০০ কেজি চিনি, ৪০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৪০০ কেজি মসুরের ডাল ও ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১১০ টাকা আর ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৬০ টাকা করা হয়েছে। তবে চিনি ও পেঁয়াজের দাম আগের মতোই রয়েছে। বাড়তি দামে পণ্য কিনতে না পেরে অনেক ক্রেতা ফিরে গেলেও আমাদের করার কিছু নেই।’

টিসিবি রংপুর কার্যালয়ের উপ-ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী প্রতাপ কুমার বলেন, ‘টিসিবির পণ্যের মূল্য মন্ত্রণালয় থেকেই নির্ধারিত হয়। এখানে আমাদের হাত নেই।’

নামাজের সময়সূচি

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১০ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
  • ৩:৩৬ অপরাহ্ণ
  • ৫:১৫ অপরাহ্ণ
  • ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
  • ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

Development by: webnewsdesign.com